ইয়ানূর রহমান : এক বছর ধরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের লিফট অকেজো রয়েছে । হাসপাতালের মতো স্থানে দীর্ঘ এসময় ধরে লিফট বন্ধ থাকায় রোগী ও স্বজনদের পড়তে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগে। ভর্তি হতে আসা রোগীদের নিচতলা থেকে তৃতীয়তলায় নিতে হচ্ছে উঁচু করে।
রোগী ও ওয়ার্ড বয়রা ধরাধরি করে হার্টের গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য তৃতীয়তলা পর্যন্ত নেওয়ার দৃশ্য হৃদয় ছুঁয়েছে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও তত্ত্বাবধায়কের। সুরাহার জন্য জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামান। সর্বশেষ রবিবার দুপুরে যশোর জেলার মাসিক উন্নয়ন সভায় তিনি লিফট নষ্টের বিষয়ে উত্থাপন করেন।
সূত্র মতে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সাথে রয়েছে ২৮ শয্যা বিশিষ্ট করোনারি কেয়ার ইউনিট। যশোরসহ আশপাশের জেলার হৃদরোগীদের সেখানে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু গত একবছর ধরে করোনারি কেয়ার ইউনিটের লিফট নষ্ট রয়েছে। সেখানে ভর্তি হতে আসা রোগীদের তিনতলায় ওয়ার্ডে নিতে স্বজনদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। রোগীদের হুইল চেয়ারে বসিয়ে চারপাশে ধরে উঁচু করে সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যান স্বজন ও ওয়ার্ড বয়রা।
যশোর শহরতলীর রাজারহাটের শহিদুল ইসলাম। শনিবার বুকের তীব্র ব্যাথা অনুভব করলে স্বজনরা তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দেন। এ রোগীকে করোনারি কেয়ার ইউনিটের তিনতলায় নিতে গিয়ে স্বজনরা পড়েন বিপাকে। লিফট বন্ধ থাকায় তাকে উঁচু করে ধরে তিনতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঝিনাইদহের মহেশপুরের রাশেদ আলী গতকাল রবিবার ভর্তি হয়েছেন একই ওয়ার্ডে। তিনিও বুকের ব্যাথা নিয়ে করোনারি কেয়ার ইউনিটে আছেন। তাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে চারজন ধরে উঁচু করে নিচতলা থেকে তিনতলায় নিয়ে ভর্তি করেন।
শুধু তারা দুইজন নন; সকল রোগীকে গত এক বছর ধরে সিঁড়ি দিয়ে হাঁটিয়ে বা হুইলচেয়ারে করে করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেয়া হচ্ছে। এক বছর ধরে করোনারি কেয়ার ইউনিট ভবনের লিফট নষ্ট হওয়ায় এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
এ ওয়ার্ডে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, হৃদরোগীদের হাঁটিয়ে তিনতলায় উঠানো যাবে না। হেঁটে উঠলে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। তাই লিফটি চালু থাকার দরকার। বিষয়টি সুরাহার জন্য তত্ত্বাবধায়ক স্যার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামান বলেন, এক বছরের বেশি সময় লিফট নষ্ট। কয়েকবার মাসিক উন্নয়ন সভায় বলেছি। জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। সর্বশেষ রবিবারও বলেছি। গণপূর্ত বিভাগ চারতলা বিল্ডিংয়ের তিনতলা পর্যন্ত লিফট লাগাতে সম্মত হয়েছে। আমি বলেছি, তিনতলা পর্যন্ত লিফট হলে রোগীরা চারতলায় উঠবে কিভাবে। তিনি এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছেন।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ। কিন্তু কার্যক্রম চলমান। টেন্ডার অনুযায়ী তিনতলা পর্যন্ত লিফট লাগানো হবে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে লিফট ব্যবহার করা যাবে বলে আশা করছি।
Leave a Reply